জনগণের রোষানলে পড়ে শেষ পর্যন্ত সিডিএ-আগ্রাবাদ ও হালিশহর এলাকার ‘গলার কাঁটা’ ও বিতর্কিত মহেশখালের বাঁধ ভাঙার কাজ শুরু হলো।
মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে বাঁধটি ভাঙার কাজ শুরু করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন-চসিক। বাঁধ ভাঙার কাজের উদ্বোধন করেন চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
নাছির উদ্দীন বলেন, অস্থায়ী ভিত্তিতে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু যেহেতু জনগণ বাঁধটির কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছিল, তাই এটি ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
তিনি বলেন, এটি ভাঙার ব্যাপারে আজই(মঙ্গলবার) মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অনুমোদন পাবার সঙ্গে সঙ্গেই বাঁধটি ভাঙার ব্যাপারেও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এ এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য মহেশখালের মুখে ২৮ থেকে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি স্লুইস গেইট নির্মাণ করা হবে।
বাঁধ ভাঙার সময় সিটি মেয়র ছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবালসহ চসিক, বন্দরের বিভিন্ন কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিপুল সংখ্যক উৎসুক জনতা।
আর সীমাহীন জনদুর্ভোগ, পরিবেশ বিপর্যয় এবং বিপুল অর্থের অপচয় করে নির্মিত বাঁধটি ভাঙার কাজ শুরু হওয়ায় উৎসব মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। উপচে পড়া ভিড় ছিল বাঁধ ভাঙাকে কেন্দ্র করে।
চসিক’র সুপারেন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার মনিরুল হুদা আরটিভি অনলাইনকে জানান, বাঁধটি ভাঙতে স্কাভেটর, ক্রেন, ট্রাক এবং ভাঙার জন্য সবধরনের যন্ত্রপাতি নিয়ে চসিকের ইঞ্জিনিয়ার এবং অন্যান্য কর্মকর্তাসহ ১০ জনের একটি টিম কাজ শুরু করেছে।
তিনি আরো বলেন, প্রায় ১০০ জনের মতো শ্রমিক কাজ করছে। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে বাঁধটি পুরোপুরি অপসারণ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।
শুরু থেকেই বাঁধটি নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিল বন্দর পতেঙ্গা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ নামে একটি সংগঠন। সংগঠনটির সভাপতি হাজী ইকবাল আলী আকবর আরটিভি অনলাইনকে বলেন, বাঁধটি ভাঙার কারণে আমরা যে কতটা খুশি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।
তিনি আরো বলেন, আমরা বিশেষভাবে আরটিভিকে ধন্যবাদ দিতে চাই। কারণ আরটিভিই প্রথম বাঁধটির কুফল সম্পর্কে প্রথম রিপোর্ট করেছিল এবং ধারাবাহিকভাবে তারা সেটি অব্যাহত রেখেছিল।
২০১৫ সালে আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকাকে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাবার হাত থেকে রক্ষা করতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তায় বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এ বাধের সুফল পায়নি পতেঙ্গা ও আগ্রাবাদের মানুষেরা।
ভারী বর্ষণের পানি নামতে না পেরে গোসাইলডাঙ্গা, আগ্রাবাদ সিডিএ, ছোটপুল, বেপারি পাড়া, এক্সেস রোড, শান্তিবাগ, হালিশহরসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এরপর বাঁধ ভাঙার দাবি জোরালো হয়।
গেলো ১ জুন নগর ভবনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন যৌথ সভায় মহেশখালের বাঁধ দ্রুত ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়।
কে/এমকে